কবিতা
আম্মার বিছানা
আম্মার বিছানা ঝাড়ু দিবো সকালে
কিছু পরিষ্কার করলে মন ভালো হয়ে যায়
বিছানার চাদর সমান করতে করতে
আর ঝাড়ু দেওয়ার শব্দে আম্মার
স্মৃতি যদি আবার ফিরে আসে
তখন উনি হতচকিত হয়ে বলে উঠবেন—
আরে আরে কি করো কি করো
আমি-ই তো পারবো বিছানা গোছাতে
তখন সেই প্রাচীন চড়ুই পাখিটা
জানালা দিয়ে ঢুকে কিচিরমিচির
করতে থাকে, আমি আর আম্মা
পাশাপাশি বিছানায় শুয়ে
থাকি আর হাত বাড়িয়ে বলি:
আমাদের মাঝখানে শুয়ে থাক
ও পিচ্চি চড়ুই, বেশি লাফালাফি
করিস না, আমরা মা আর ছেলে
ঘুমাবো ঠিক আগেকার মতো
আম্মার গর্ভে আবার জন্ম নিবো, নূতন
ফকফকে বিছানায় হামাগুড়ি দিবো
জ্যামিতির ত্রিভুজ
এতো যে অন্তরীণ হয়ে থাকো
নানাবিধ তৈজসের অতলে
আর তোমার ভেতরেই ঘটমান
আমি, হাতড়ে ফিরছি সেই তল
যেনো কিছু ঘটবে সহসাই
যেনো খুব সহজেই তুলে
আনতে পারবো এবার
তোমাকে বস্তুর দুর্বহ ভার থেকে
আমাদের সামনে পড়ে আছে
রাশিরাশি ধাতু, কাচ, তৈজসের
ঝনঝন আর একটা পলিমার
ফুল তুমি যুগ যুগ ধরে আটকে
আছো প্লেটের বৃত্তাকার চক্রে
তোমাকে পণ্যের অনম্য দশা
থেকে মুক্ত করতে চাই, তবুও
বারবার ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকো
অনড় আর চোখ ধাঁধানো যতো
বস্তুর অবয়বে— তুমি কি ঠুনকো
ক্রিস্টাল কোনো, আলতো ক’রে
ধরতেই ঝুরঝুর ক’রে ভেঙে পড়বে?
গোটা একটা শরীরের জঙ্গমে
হয়তো পাবো তোমাকে তাই
সাঁতরাতে থাকি আঠার সাগরে
আর সে বীর্যের আমোঘ আঠায়
জুড়ে গিয়ে রক্তমাংসে তুমি
আনন্দে লাফ দিয়ে ধরতে
চাইবে এই জাগ্রত পৌরুষ
জ্যামিতির ত্রিভুজ তুমি,
জীবন্ত হয়ে উঠবে কি
সব কাঁটা-কম্পাস ভেঙেচুরে?
কাঁপে শিরা-উপশিরা
আমাদের মাঝখানে ভেদরেখা আছে তবু
তড়িঘড়ি করে যখন ছুটছি একটু দেখার
জন্য একফালি মুখ, অথচ বাসার আসবাব
এমন আকারে সাজানো রয়েছে তাতে বেঁধে যায়
পা, আর আটকা পড়ে যাই এতোসব বেড়াজালে
সেই ঘন রাতে তোমার মুখের মতো ওঠে চাঁদ
এসব উপমা বহুকাল আগে হয়েছে অচল
কারো সাথে তোমার মুখের তুলনা চলে না আর
একমাত্র জ্বলজ্বলে জ্বলজ্যান্ত হাস্যরত তুমি :
এতো দূর থেকে সেই ঢেউ এসে আছড়ে পড়ছে
আমাদের দরোজা-জানালা আঁটা দালানের কাছে
ভূত ভূত বলে চমকে উঠেছে দালানবাসিরা
শুধু বুঝি কে হাসে এমন, কাঁপে শিরা-উপশিরা