ঝুরোগল্প
খাপছাড়া
এক পুকুর জলে জ্যোৎস্না ভেঙে পড়েছে।ডিম ভাঙা বিস্ময় ছড়িয়ে পড়ছে জলে।একটি সোনার মেয়ে দূরে দাঁড়িয়ে দেখছে।নয়নতারা।ছাদ।যেখান থেকে সলমা জড়ির আকাশটা ছোঁয়া যেত সেখান থেকে সে হঠাৎ মেলে দিল ডানা।জলের অতল থেকে উঠে এসেছে সাদা পক্ষীরাজ। মেয়েটা দেখছে।আজ দিনভর ছিল হোলিখেলা। ফাগ উড়েছে। আকাশ থেকে নেমে এসেছে সে। সমস্ত চোখ অতিক্রম করে মাখিয়ে দিয়েছে রং।ঠোঁট ছুঁয়েছে আচমকা ঠোঁট। মেয়েটা জানে না কাফি রাগে আলাপ শেষ হলেই তারই প্রিয় বান্ধবী নিয়ে যাবে তার প্রেমিক কে।শুধু এই রাতটুকু বেঁচে আছে রাজকন্যা। তারপর সোনার কাঠি ছোঁয়া পেয়ে ঘুমিয়ে পড়বে সে। মৃত সেই ছায়া যাত্রা পথে অনন্তর দেখা পেতে পারে একদিন।
একদিন এই চাঁদের ভেলায় চড়ে সোনার মেয়েটি চলে যাবে ভেবেছিল রূপোর স্রোতে ভেসে।
তারপর এই নিশিরাত কতকাল পর।সে আর কঙ্কাবতী রাজকন্যা নয় আগুনে পুড়ে লোহা হয়েছে ইস্পাত।
তৈরী হয়ে বেরোতে বেরোতেই কত রাত। সেই রাতের মধ্যে বেরিয়ে দেখা গেল আরও রাত গোঁজা। যেমন কালো রাস্তার মাঝ বরাবর কালো বেড়াল,জ্যোৎস্নার আলোয় ভিজে লক্ষ্মী প্যাঁচা।
এসব নিয়ে কাব্য নাট্য লেখালিখি হয়। তবু খালি চোখে দেখতে গেলে প্রতিবার অবাক।
অনেক সময় ভদ্র ভাবে বলা হয় যাকে কামনা কিম্বা ডিজায়ার। এরকম খাপে খাপ রং জাগায় ওসব। ডিজায়ার কি?সোজা কথায় ঠাপ।ঠাপের জন্য সব।ওই যাকে বলে প্রণয়। ভাতের জন্য যেমন তরকারি। তরকারির জন্য ভাত নয়।আমাদের অজিত রায় এরকম লিখত।ভালোই লিখত।তবে নিতে পারেনি লোক অত সত্যি কথা।
বেরোতে দেরি হওয়ার ফলে আরও অন্ধকারে ঢুকে গেল ট্রেনটা।যেন খাটের তলায় ভ্রমণ।কত কী যে অন্ধকারে আবিষ্কার।
এই একটা গ্রহ যার ভিত শুধু যৌনতা আর সন্ত্রাস। সেখানে খাপছাড়া কেউ কেউ শান্তি ছেটাতে গিয়ে অকালে খসে গেছে। খসবেই।কার এত সময় আছে এসব অলীক নিয়ে দেরি করার।মানুষ হামেশা লোকালয় ছেড়ে অলীকনগরে যেতে চায়।আলোর ভেতর টর্চ জ্বেলে অন্ধকারের খোঁজ করতে করতে দিবস যামিনী হয়।
অলীক মানে ভাল। ভাল একটা এমন শব্দ যার একটা ছক ঠিক করা আছে সব সমাজে,পাড়ায়। সেই অনুযায়ী মানুষেরা প্রাণপন ওই ছকটা দেখাতে চায়।মানুষ বোঝে বা বোঝেই না যে মানুষের মজ্জায় রয়েছে ব্ল্যাক ক্যাট যাকে কখনোই ছকে ফেলা যাবে না।মেয়েরা ভাবে ছকে থাকা নিরাপদ।অথচ মনে মনে অলীক দ্বীপান্তর।মেয়েটি যুবতী।মেয়েটি বৃদ্ধা।কথারা আকাশে ওড়ে।মেয়েটির নাম ধরা যাক নড়েবালা দেবী। রাতের কপালে ভাঁজ।খাপছাড়া নানা কথা উড়ছে মনে।সুরঙ্গের তিমির পথে
এভাবে দেরিতে শুরু হলে পৌঁছতে আরো কত দিন টপকাতে হবে কে জানে।ততক্ষণ চলবে চলা।ট্রেনের দৌড়।শিরিষ গাছের নীচে যুবতী বাঘিনীর লাশ ঘিরে আছে মথ। আলো আর ছায়া সুতনুকার ছেলে মেয়ে আসে যায়।নড়েবালা দেবী ঢোঁক গেলে ব্যর্থ প্রণয়।ট্রেন থামে না।থামা নেই। সবুজ শষ্য খেত ছেড়ে মরুভূমি দেখা দেয় জানলায় আটকে আছে উট কাঁটা ঝোপে,চাঁদের আলোর সে কি প্রতিভা!
জানলার ধারে বসে নড়েবালা বিড়ি ধরায় গুটিসুটি বসা বনমালীর থেকে আগুন নিয়ে।
এখানে ঘড়ি বলে কিছু নেই। একসময় একটা মাটির স্টেশনে হাল্কা দাঁড়াবে ট্রেন। চাঁদের আলোয় নামবে নড়েবালা। দ্বিতীয় বিড়িটা প্লাস্টিকের চটিতে পিষে।চাদ্ধার দেখে নেবে।তারপর বিরাট সাদা ডানা দুটো মেলে বোঁ করে এক চক্কর দিয়ে উড়ে যাবে মরা নদীর ধারের অশত্থের ডালে। প্রথমেই পচ করে হাগবে ঘুমন্ত কাকেদের ওপর।তারপর নিজের বাসার ভেতর আয়েস করে খাবে।আর পাশ ফিরে ঘুমোবে।ট্রেন চলছে আকাশের পথ ধরে।
রাত পুকুরে চাঁদের ডিঙা ভাসছে ।একটা শুন্য ছাদ।একাকী চাঁদ গড়িয়ে পড়ছে মেঘের যোনিতে।