জ্যোতি পোদ্দার 

কবিতা

জঙ্গলনামা সিরিজের কবিতা

একটা পাতা আরেকটা পাতাকে সম্পূর্ণ 

আড়াল করতে পারে না।

কোথাও কিছুটা আব্রু;

কোথাও উদলা–

একাই বাতাসের ভেতর হেলদুলে নাচে।

কোথাও জড়িপাড় চুমকি শাড়ির আঁচল 

                  অনেক কথার উন্মুখ প্রান্তর। 

কোথাও আবার স্রেফ সুতা

                         সাদা সুতা। 

বড্ড বাহুল্য আর বড্ড মুখরা।

একটি পাতা

আরেকটি পাতা

একটি গাছ অনেক পাতা।

উন্মুখ সজীবতার জড়ানো ছড়ানো বিন্যাস।

পাতার ভেতর সবুজ আর সবুজের ভেতর পাতা

নিয়েও একে অন্যকে সম্পূর্ণ আড়াল 

                               করতে পারে না।

কোথাও কিছুটা আব্রু;

কোথাও উদলা–

একাই বাতাসের ভেতর একটি পাতা অন্য একটি

পাতার পাশে হেলদুলে নাচে।

কী পাখি! কী পাখি!

বেশ তো 

বেশ তো

রঙিন সুতার ডানা।

পাতার ভেতর থেকে চটকে আসা আলোয়

                   পাখির ঘাড়ে আঁকা নয়নতারা

আরো চকচক করছে।

আর চকচকের ঠমকে চমকে পাখিটি আমাকে

দাঁড় করিয়ে দিলো জঙ্গলের ভেতর।

চোখ অপলক।

                 হাত নিশপিশ করছে।

                             নিশানা ঠিক।

কী পাখি! কী পাখি!

বাহারি রঙিন সুতায় কাটা পুচ্ছ 

                          নাচছে নাচছে

আমি দেখছি

আমি দেখছি

                   পুচ্ছ নাচছে

রঙিন বাহারি সুতা নাচছে

আর আমার মুখভরা জলের নাচনে

ঠোঁট বেয়ে পড়ল কি একটু লোল?

রকিঙ চেয়ারে পায়ের উপর পা রেখে–

পা দোলানোর মতো করে

আয়েশি ঢেকুর তুলবো আজ।  

কয় গ্রাম আর মাংস হবে?

বাহারি রঙিনে মন ভরে লোভ মেটে

আর গল্পের পর গল্পও জমে জমে

স্বাদ মেটে যেমন তেমনি সাধও মেটে। 

খুঁটে খুঁটে তোলা ফড়িং নানা পতঙ্গ 

আর গেরস্থ বাড়ির উঠানের কালাই খেয়ে 

খেয়ে ভরা–খাদ্যনালি পুটলির মতো 

ঝুলে আছে মা-পাখির গলার কাছে।

আমার চক্ষু স্থির।

নিশানাও।

পা-পাখি ডালে ঠোঁট ঘষে ঘষে ধুয়ে 

নিচ্ছে এঁটো ঠোঁট;দিনের ক্লান্তি 

আর অনেক দূর থেকে ঘরে ফেরার স্বস্তি। 

চোখ অপলক।

নিশানা ঠিক।

টিগারে বাঁকা আঙুল..

দ্রিম…..

দ্রিম….

ঠোঁট বেয়ে পড়ল কি আরেকটু লোল?

কতদূর!  কতদূর!

অজানা দূর।

সব দূরের ঠিকানা নেই।

পোস্ট কোড নেই।

              থাকতেও নেই।

কেবলই চলা।

কেবলই চলন্ত ক্রিয়াপদ।

কেবলই চাক্রিক বৃত্তের ক্রিয়াপদ।

এই সব গল্প—গল্পের আখ্যান।

কতো কতো ঘাট কতো কতো বাঁকে বাঁকে

                               ভাসতে ভাসতে হঠাৎ 

তুমি কিনা আটকে পড়লে এই 

মহাঋষি নদীর চড়ায়?

এই উত্তর জনপদে গারো পাহাড়ের পায়ে?

সব গল্পের আখ্যান আমি জানি না।

আমি আমার গল্প সাজাই।

আমার গল্প নিয়ে বাঁচি।

একদিন এই চড়ায় উপুড় হয়ে খুঁজতে খুঁজতে 

যে  তুমি আমার করোতলে উঠে এলে

সে তুমি নানা কারুকাজ করা 

            কৌনিক নুড়ি

               চেপ্টা নুড়ি

              ঝালর নুড়ি

                রম্বস নুড়ি

সে-তোমারই নিজের গল্প রয়েছে যেমন

তেমনি তোমার  নানা ঘাটের গল্প

নানা বাঁকের গল্প।

গল্পের বনুনে নানা গল্পের জীবন। 

                       গল্পের মহাজীবন।

অথবা মহাজীবনের গল্প।

গোল মতো সুডৌল গোল কালো পাথর

কুচকুচে কালো জলের মতো

                             পেলব কালো পাথর

বাড়িতে আনতেই লালশালুর আঁচলে

আঁকড়ে ধরল গিন্নি বুকের কাছে

:   এ যে শালগ্রাম শীলা। 

    লক্ষ্মীর সঙ্গী–বিষ্ণু।

   দেখো দেখো, শিউলি ফুলের পাঁচ পাপড়ির                            

   আঁকা চন্দনে চর্চিত শালগ্রাম শীলা–আমাদের নারায়ণ।”

কোথায় চন্দন পেলে?

এ তো এঁটেল মাটির দাগ। 

                 রোদে শুকিয়ে যাওয়া মাটির দাগ

কালোর গালে লটকে আছে

                তিলক চিহ্ন হয়ে।

আঙুলে ডলে দাও ঝুরে ঝরে করে পড়বে

সব চিহ্ন।

সব কথা।

: বিজোড়ে কি আরাধনা চলে গো?

  জোড় চাই, জোড়।

  জোড়ে জোড় বাঁধলেই তবে 

  মহাপ্রাণে মহাপ্রস্থান।

সবই গল্প–গল্পের আখ্যান।

যেমন সাজাও তেমনি সাজে।

যেমন নাচাও তেমনি নাচে।

মূলত মানুষ গল্প নিয়ে বাঁচে।

একেক জনের কাছে একেক গল্প। 

কোনটা নীল জলে ছোপানো

                            কোনটা লাল জলে—

কোনটা আবার মেজেণ্ডা রঙের জলে

ভিজিয়ে রেখেছে রোদ উঠলেই উঠানের

টান টান তারে মেলে মেলে 

জবজব ভেজা গল্পের শাড়ি।

ছেলেটি হাতে নিয়েই বলল,

: বাবা দারুণ মার্বেল। গোল কালো মার্বেল।

আমাকে একদিন শুকিয়ে যাওয়া ঝোড়ার                        

                                     কাছে নিয়ে যাবে? 

আরো আরো কালো মার্বেলে পকেট ভরব।

তারপর কাচের মার্বলের ভেতর খয়েরি 

রঙের যে পাখির পালকে বন্দি হয়ে আছে 

তাকে মুক্ত করে দেবো আমাদের স্কুল মাঠে।

জানো তো বাবা, কালো পাথর মানে 

ব্লাক স্টোন

 ব্লাক হোল। 

সব—সব কিছুই আসা আর যাওয়া 

দুই-ই ব্লাক হোল। 

ইন্টারভ্যালে শুধু সাদা।

বিরতির আগের বিন্দু

আর বিরতির পরের বিন্দু স্রেফ 

গোল মতো সুডৌল গোল কালো পাথর

কুচকুচে কালো জলের মতো মার্বেল।

মানুষই গল্প বানায়।

অথবা গল্পে গল্পে জীব মানুষ হয়ে ওঠে।

                             সক্রিয় কর্তা হয়ে ওঠে। হাতে তুলে নয়া কালের হাতিয়ার।

সম্পর্কিত

মিনু মৃত্তিক

কবিতা মাথাটা হেলে রাখলে গড়িয়ে পড়ে তরল বীজ ১ মাথাটা ফাঁকা করে ফেলেছিতুমি রাগ কোরো নাশত চেষ্টা করেও কোনো দানাবিন্দু...

সুপ্রিয় সাহা

কবিতা ব্যালেন্স যে জানালায় বাতাস বেশি  সেখানে বৃষ্টির ছাঁটও আসে  উৎপলকুমার বসু তুমি আমার স্বপ্নে পাওয়া ড্রাগ স্পর্শ করি নেশার...

দেবযানী বসু

কবিতা সোনালী জেলিফিশের অঞ্চল সোনালী জেলিফিশের অঞ্চলনভ হতে জন্ম সেটা পাতালগুহার জানা ছিল। সময়ে শাকসবজির বিকিরণে ধরা দেবে। নব নব...

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top