গল্প
আবরণ
প্রেক্ষাপট বা ব্যাকগ্রাউন্ড, যাই বলা হোক না কেনো- Political correctness এর যুগে
শব্দদ্বয়ের যে কোনো একটা, ব্যবহৃত হয় যুগের আবশ্যক চাহিদায়; সহজাত
মনোভঙ্গির চাইতেও আরোপনের সামগ্রিক চাপ বেশী দৃশ্যমান হয় সেই ব্যবহারে- তবু,
একে উপেক্ষা করে কোনো বয়ানের বলিষ্ঠ ব্যাখ্যা দেওয়া যায়? জীবন খণ্ডিত হয়
নানা উপাদানের যোগফলে। কিন্তু তার ব্যাখ্যার খণ্ডিত অবয়ব বিপজ্জনক, ওতে আস্থা
রাখাটা প্রশ্নাতীত অন্ধত্ব।
আফরিনকে সহজ-সরল বর্ণনায় সঠিকভাবে উপস্থাপন করাটা কঠিন; কামিনী ফুল
ভালোবাসে, রাস্তাঘাটে চলার পথে কোথাও দেখলে এখনো মুগ্ধ হয়। ভাবে, সৌকর্যের
চূড়াকে স্পর্শ করলে যে তৃষ্ণা জাগে; কোন ব্যবহারিক ভাষায় বা মর্মমূলে তাকে
শনাক্ত করে অনুপ্রেরণায় সামনে এগোবে? আবার দেখো, সোশিও – পলিটিকাল যে
কোনো ইস্যুতে পর্যাপ্ত বোঝাপড়া থাকলে নিঃসংকোচে নিজের মতামত প্রকাশে পিছপা
হয়না। পরিপার্শ্বের কাছে নিজেকে প্রমাণ করতে নয়, অন্তর্গত তাড়নামূলে অগ্রসর হয়।
সোনালী- কালো রঙের কম্বিনেশনের শাড়ি পরলে সর্ষেক্ষেতের হলুদ রঙের এক গোছা
চুড়ি ও মালা পরে নিতে ভুল করেনা। জানে, অসূয়াক্রান্তরা যতোই এলিটিস্ট বলে
খোঁচা দিক না কেনো, সৌকর্যের টোটালিটির প্রতি মানুষের আকাঙ্ক্ষা পরম্পরাজাত
মনোভঙ্গিতে অদম্য।
পরিপার্শ্ব কখনো কখনো অনাবশ্যক নির্মম; আবার ঘোরতর বিপর্যয়ের সময়গুলোতে
নিজের সংবেদনকে সামলে সংহত থাকতে জানে- উভয় অভিজ্ঞতার সাথেই ঘনিষ্ঠ
পরিচয় ঘটেছে আফরিনের। কোনদিকের পাল্লা যে ভারি, দুই একবার তা ভাবতে
গিয়ে মন আরো বেশী সংশয়াচ্ছন্ন হয়েছে। বৈশাখের ঝড় নাকি মাঘের রোদতপ্ত
দুপুর- উভয়ই তো নিজ নিজ অনিবার্যতায় আকাঙ্ক্ষিত, কার উপস্থিতি বেশী কাম্য
নির্ধারণ করবে কে? কোন নিক্তিতে?
সেদিন সন্ধ্যায়; সেমিনারে বসে থাকতে থাকতে বিবিধ ভাবনায় এলোমেলো হয়ে
পড়ছিলো, প্রজ্ঞার যেই স্তর আত্মবিশ্বাসী ও দৃঢ় থাকতে সাহায্য করে- তাকে মনে
হচ্ছিলো ভঙ্গুর। অরুন্ধতী রায় আফরিনের প্রিয় লেখক। ব্যক্তিগত জীবন হোক কী
সোশিও– পলিটিকাল ইস্যুগুলোয়; মননশীল মনের যত্ন ও এগিয়ে চলার অনুপ্রেরণা-
তার কাছেই তো ঋণী। আফরিন ভাবছিলো, কোনো একটা কেলেঙ্কারী বুঝি ঘটেই
যাবে- সেমিনারে জনসমক্ষে তার ব্রেকডাউন হবে, কার্যকারণ সম্পর্কে নূন্যতম আঁচ
করতে পারবেনা বলে সকলেই হতভম্ব হয়ে পড়বে, একটা প্রফেশনাল অকেশনে সবাইকে
এভাবে বিব্রত করাটা; আফরিন ভাবতে পারছিলোনা। চল্লিশ মিটার দূরত্বেই স্টেজ,
তবু সবকিছু ঝাপসা দেখছিলো, বক্তা কী বলে চলেছে কিছুই শুনতে পাচ্ছিলোনা-
আফরিন জানে গৎবাধা কথাই হবে হয়তো, এসব সেমিনারে এর বাইরে আর কীই বা
হতে পারে? তবু সে মন দিয়েই শোনে, শ্রুতিধর হিসেবে চারিদিকে তার সুখ্যাতি
আছে। বাধাধরা নিয়মমাফিক কথাবার্তার মাঝেও কখনো কখনো এমন দুই একটা
কথা বেরিয়ে আসে, যা আজীবন মনে দাগ কাটে; আফরিন অনেকবার এমনটা
দেখেছে। শব্দই ব্রহ্ম, কথাটা তো আর এমনি এমনি মানুষ বলেনা।
আফরিনের চাপের বিষয়গুলো সম্পর্কে ওর কলিগ মারুফা বিস্তারিত জানে। সে দেখতে
পেয়ে ধীরস্থির পায়ে এগিয়ে এলো। ফিসফিস স্বরে বললো, “গেট এ গ্রিপ অন
ইউরসেলফ।” রুঢ় হয়ে গেছে বুঝতে পেরে, কাঁধে হাত রেখে কণ্ঠে পর্যাপ্ত এমপ্যাথী
এনে বললো, “উই আর ইন এ ডিফারেন্ট ওয়ার্ল্ড রাইট নাও আফরিন। এ ওয়ার্ল্ড
দ্যাট হেল্পস আস বিয়িং ডিসট্র্যাক্টেড ফ্রম আওয়ার হার্ডশিপস।”
আফরিন মারুফার দিকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়েছিলো। ফের চোখ নামিয়ে মৃদু দীর্ঘশ্বাস
ফেলে বক্তৃতা শোনায় মন দিলো।
ঘটনার সূত্রপাত, আফরিন এখন নিশ্চিত জানে- চার বছর আগে থেকে। সেই প্রথম
আপন অনুজ আফজালের অভূতপূর্ব উদ্ভ্রান্ত চলাফেরা তার চোখে পড়েছিলো। আফজাল
তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। ছয়ফুটের কাছাকাছি উচ্চতা, শ্যামবর্ণ,
টানা টানা চোখ- সকলেই মেধাবী ও সম্ভাবনাময় হিসেবে চিহ্নিত করে তার ব্যাপারে
আশাবাদী।
বাসার সকলেই টের পাচ্ছিলো, আফরিন সবার আগে, যে, আফজাল ক্রমশ উগ্র হয়ে
উঠছে- কারণ সবার বোধগম্যতার বাইরে।
আফরিন লক্ষ করতো, সেজেগুজে যখন বাসা থেকে বের হচ্ছে, এটা চোখে পড়লেই
আফজাল চোখ নামিয়ে নিচ্ছে। প্রশ্ন করবে করবে ভেবেও কখনো করা হয়ে ওঠেনি।
আফজালের ঘর সর্বদা টিপটপ থাকে। শৈশব থেকেই। একটা পড়ার টেবিল, পালিশ
করা পুরনো চেয়ার, মাঝারি সাইজের বইয়ের তাক, আলমারি; আফজাল সাদা রঙ
ভালোবাসে- সেই ভালোবাসার লক্ষণ জানালার পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা তিনটি ধবধবে
সাদা রঙের পর্দায় স্পষ্ট। পর্দাগুলো অন্য কাউকে দিয়ে ধোয়ানো দূরে থাক, লন্ড্রিতে
পর্যন্ত কখনো দিতে দেয়নি। সবসময় নিজেই ধুয়ে অভ্যস্ত। এ নিয়ে বাড়ির কর্তা
আতিকুল ইসলাম প্রায়ই বিরক্ত হতেন-
“এটা কী ধরণের বাতিক? অন্য কেউ ধুলে সাদা পর্দা কালো হয়ে যাবে নাকি?
আমার ছেলেমেয়েগুলা এতো পিকিউলিয়ার হলো কীভাবে?”
তুচ্ছ গার্হস্থ্য বিষয়; বাড়ির প্রধান এসবেও যদি ইনভল্ভড হয়, তাদের বেঁচে থাকাটাই
দুর্বিষহ হয়ে উঠবে। অন্যরা নীরব হেসে আতিকুল ইসলামের বিরক্তিকে নিয়ন্ত্রণে
রাখতো।
যেদিন ভার্সিটিতে ক্লাস থাকতোনা; আফজাল পর্দাগুলো সরিয়ে বাইরে জানালা দিয়ে কী
জানি দেখতো। বেশ কয়েকবার এমন হয়েছে; আফরিন কোনো কেজো প্রয়োজনে সেই
ঘরে এসেছে, কিছু বলবে, এসে দেখে- চোখের দৃষ্টিসীমাকে যতোখানি সম্ভব বিস্তৃত
করা সম্ভব, তা করে আফজাল জানালার বাইরে কী যেনো দেখছে আর ভাবছে;
মুষ্টিবদ্ধ হাত; বিছানায় কিছু চটিসাইজের বই এলোমেলোভাবে বিন্যস্ত; এ এক অলিখিত
নিয়ম তাদের পরিবারে- একজনের বইয়ের দিকে অন্যেরা কখনো কৌতূহলের দৃষ্টিতে
লক্ষ করেনা। যেনো তা করলেই, সেই মানুষের পৃথিবীতে অহেতুক হস্তক্ষেপ করা হবে।
আফরিনের অসংখ্যবার মনে হয়েছে- অযাচিত হস্তক্ষেপের জ্বালা যেমন বহুমাত্রিক; তার
ওভার কমপেনসেশন হিসেবে দর্শকের নিষ্ক্রিয়তাও কোনো সংকটকে ঘনীভূত করে।
রোমেলের সাথে এই নিয়ে কতোবার ঝগড়া হয়েছে। বিষয় অনেকগুলো, কিন্তু ঝগড়ার
কেন্দ্রবিন্দু এক।
রোমেল উত্তেজিত হলে দ্রুতবেগে ডান হাত নাড়ায়, মুদ্রাদোষে, আফরিনকে বারবার
বোঝাতে চাইতো-
“দেখো আফজালকে নিয়ে তোমাদের কনসার্নের বিষয়টা আমি বুঝিনা সেটা তো না।
কিন্তু তোমরা কী ভাবো? ওকে চার্জ করলে বা ধরে বেঁধে রাখলে তার ক্রাইসিসগুলা
তোমরা বুঝতে পারবে? অসম্ভব, এভাবে হয়না। ভার্সিটিতে পড়া একটা ছেলে, শার্প,
ইন্টেলিজেন্ট, কোনো প্রকারের নেশাও করেনা- কোন যুক্তিতে হস্তক্ষেপ করবে? তার
সাথে সময় নিয়ে কথা বলে দেখতে পারো…………এমন আরো অনেক কথা।
রোমেলের যাবতীয় কথাবার্তার পেছনের যুক্তি একটাই- সেন্স অব র্যাশনালিটি থেকে
বিচ্যুত হওয়া যাবেনা। ইন্টারফেয়ারেন্স বা গোয়েন্দাসুলভ নজরদারী তো অনেক দূরের
কথা।
কোথায় যেনো সে পড়েছিলো; কোনো সিনেমার উক্তিই হবে হয়তো- The world is
destroyed by unemotional rational men deciding shit. কথাটা সিনেমার জন্যে
উপযুক্ত, বেশ মেলোড্রামাটিক। কিন্তু মাঝেমাঝে আফরিনের মনে প্রশ্ন জাগে- মননশীল
যুক্তিতর্কের জন্যে কথাটা কি একেবারেই বেমানান? রিয়েলিস্টিক বা র্যাশনাল হতে
গিয়ে দানবে পরিণত হবার যে সম্ভাবনা সুপ্ত থাকে, তাকে অস্বীকার করবে কোন
বিচারে? রাজনৈতিক সচেতনতা, তীক্ষ্ণ সমাজপাঠ, স্থির মনন- এসবকে ক্যাজুয়ালী
দেখবার কথা আফরিন ভাবতেই পারেনা, কিন্তু এগুলোই তো সব নয়। দেখাটা
এরকম একপেশে হলে জীবনের আস্বাদন বলি কী বিস্তৃতি, খর্ব হতে বাধ্য। আফজালের
বিষয়ে তার উদ্বিগ্ন মনোভাবের টোটালিটি তো আছেই, এরকম খুচরা অনেক ভাবনাও
সঙ্গত কারণে তার মনে উঁকিঝুঁকি মারতো।
বাবার সাথে আফরিনের সম্পর্কটি সহজ ছিলোনা। কিন্তু আফজালের প্রশ্নে তাদের
ভাবনা ও অনুভূতি সাদৃশ্যপূর্ণ ছিলো।
“তোর মায়ের সাথে শেয়ার করবো, সেই উপায়ই নেই। কথায় কথায় টেনশন করে।
তোর কী মনে হয়, কয়েকদিনের জন্যে সবাই মিলে বাইরে ঘুরে আসবো? তোর
মায়ের শরীরটা ভালো যায়না। কিন্তু হাওয়াবদল করলে তারও নিশ্চয়ই ভালো লাগবে।
অনেকদিন ধরে কোথাও যায়না। আফজালের মতিগতিও হয়তো বোঝা যাবে।”
আতিকুল ইসলাম স্বভাবসুলভ ধীর স্বরে কথাগুলো বলে কৌতূহলী চোখে তার দিকে
তাকিয়ে থাকেন।
আফরিন বেশী কিছু না বলে প্রস্তাবে সায় দিয়েছিলো। সম্ভাব্য অন্যান্য অপশনগুলো
সম্পর্কে সে বেশ সন্দিহান ছিলো। হয়না এমন, অনেকগুলো উপায় সম্পর্কে সন্দেহ
আছে, এমন সময়ে নতুন কোনো উপায়ের সন্ধান পেলে তাকেই সবচেয়ে বেশী
গ্রহণযোগ্য বলে মনে হয়?
প্রথমে বেশ চাপ হয়েছিলো। মাইক হাতে নেওয়ার পরে প্রথমে আফরিনের মনে
হয়েছিলো যে, মাথা ঘুরে পড়ে যাবে। কোথা থেকে আলাপ শুরু করবে? দক্ষিণ
এশিয়ায় টেরোরিজমের প্রভাব ও কীভাবে তাকে কমব্যাট করা যায় এই হলো
সেমিনারের মূল বিষয়। হাতে তথ্য-উপাত্তের তো অভাব নেই, অগুনতি রেফারেন্স ও
বইপত্র তার জানার আওতায়; কিন্তু সবই তো গোলমাল হয়ে যায়। বাসা থেকে
পালিয়ে যাবার আগের রাতে আফজাল গরুর মাংস খেতে চেয়েছিলো। বাসার সকলে
অবাক হয়েছিলো। আফজাল এভাবে তো কখনো আগে কিছু চায়নি- অবাক হলেও
তাদের মনে হয়েছিলো, এ বুঝি পরিবর্তনের লক্ষণ। খাওয়াদাওয়ার পরে সারারাত
জম্পেশ আড্ডা; মূল্যবোধগুলো যখন বিশ্বাসের সুরে বাজছে বলে অনুভূত হয়, অন্তর্গত
সৃষ্টিশীলতা নতুন করে পথ খুঁজে পায়- এই ভেবে আফরিন আপ্লুত ছিলো।
সকালবেলায় সবাই বুঝেছিলো- নো পয়েন্ট অব রিটার্ন। আফজালের চিঠিতে তাদের
কারো প্রতি অনুযোগ ছিলোনা, অন্তর্গত ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতি অটুট আস্থা আফজালকে
কীভাবে সশস্ত্র পথে যেতে উৎসাহ যুগিয়েছে- চিঠিতে তার পূর্ণ বিবরণ ছিলো।
আফজালকে ত্যাজ্য ও পরিবারে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়। কিছু দুঃস্বপ্ন থাকে এমন,
যার থেকে দ্রুত নিষ্কৃতি পাওয়া দরকার এই বোধটুকু দ্রুত সচল হয়। আফজালের
প্রশ্নে তাদের মনে দ্বিধার জায়গাটুকু ক্রিয়াশীল হয়নি। প্রথম দিকে পরিপার্শ্বের বহুমুখী
চাপ সামলে নিয়ে তারা যে যার মতো করে এগিয়ে চলছিলো। আফজাল ততোমধ্যে
তাদের কাছে এমন এক অধ্যায়, যাকে ঘৃণা সহকারে দূরে সরিয়ে দেওয়ারও আর
কোনো প্রয়োজন ছিলোনা। দুই বছর পরে, কার্তিকের তৃতীয় সকালে বাসায় খবর
আসে। একটি লাশ শনাক্ত করতে হবে। এই ঘটনার ছয় মাসের মাথায়, আফরিন
মাতৃহারা হলো। আরো তিন মাস পরে, পিতৃহারা। আফরিন ততোমধ্যে পরিপার্শ্বকে
কমব্যাট করতে শিখেছে। ব্যক্তিগত ট্রমাগুলোর ক্ষত ধীরে ধীরে সারিয়ে তুলতে চেষ্টা
করলো, তারপরে বস্তুনিষ্ঠ মূল্যায়নে অগ্রসর হতে চাইলো- আফজালের আন্ডারগ্রাউন্ড
ধর্মীয় রাজনৈতিক দলে যোগদানকে নৈতিক মানদণ্ডে বিচার করতে যাওয়াটা খণ্ডিত
সিদ্ধান্তের দিকে চালিত করতে পারে, বুঝতে পারছিলো। চারপাশের সাথে সংঘাত,
অন্তর্গত সামাজিক- রাজনৈতিক বিশ্বাস থেকে উৎসারিত কর্মকাণ্ড ক্ষত সারানোর পথে
কতোখানি সহায়ক হতে পারে? যেনো ছুরির মতো বস্তু, কেউ চায় আপেল কাটতে
আবার কেউ অন্যের পেটে বসিয়ে দিতে। আফরিন ক্যারিয়ারের প্রতি আরো মনোযোগী
হলো, তার ঝোঁক প্রধানত একাডেমিকসের প্রতি; নিজেকে তার প্রতি সমর্পণ করলো।
চিরাচরিত কমন এস্কেপ রুট বলে অনেকে ভাবতে পারে, সেই ভাবনাকে প্রশ্রয় দিতে
চায়নি। রোমেলের সাথে দূরত্ব ক্রমশ বাড়তে লাগলো। শ্রাবণ মাসের এক বিকালে
যখন ধীরকণ্ঠে নিজের অপারগতার কথা জানালো- আফরিন কিছু জিজ্ঞেস করেনি।
যেনো, এই যুগে বিশ্বাসের প্রতি আস্থা উঠে যাবার প্রশ্নে চিৎকার করে ওঠাটা
অর্থহীন। সদিচ্ছা যখন সঙ্গতির প্রসঙ্গে এসে বারবার হোঁচট খেয়ে থেমে যেতে আগ্রহী,
অন্তর্গত কোন ভরসায় তাকে নিয়ে ধারাবাহিক পথ চলবে? দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাস
যে কোনো বিষয়ের বহুমাত্রিক সম্ভাবনা অফার করে, কথা বলতে বলতেই আফরিনের
তা আবারো মনে হচ্ছিলো- কথা বলার সময়ে অডিয়েন্সের সাথে আই কন্টাক্টে সে
পারদর্শী, ভায়োলেন্সের ইস্যুতে কথা বলতে শুরু করার সময়ে একটি ঘরের চিত্র
চোখের সামনে ভাসছিলো- তিনটি ধবধবে সাদা রঙের পর্দার ছবিতে এসে থেমে
যাচ্ছিলো, একসময় দেখলো- অডিয়েন্স তুমুল শব্দে হাততালি দিচ্ছে। পেছনে ফিরে
প্রজেক্টরের দিকে একবার তাকালো, বক্তব্য শেষ হবার পরে স্টেজ থেকে নামার
কিছুক্ষণ পরে তার মনে হয়েছিলো- জনতা বা ক্রাউড এমন এক আবরণ, উন্মূল
অবস্থা থেকে রক্ষা করার সমান্তরালে ইল্যুশনের ডিসেপশনকেও পাকাপোক্ত করে। কিছু
অভ্যস্ততা, যেনো স্ট্রিটল্যাম্পের আলোগুলো বিনা সংকেতে অকস্মৎ নিভে গিয়ে
দিশেহারা করে দিলো- পাবলিক এপ্রিসিয়েশন একে মোকাবেলা করার যথার্থ প্রতিষেধক
নয়।
আফরিন পাশ ফিরতে ফিরতে একবার ঘড়ির দিকে তাকালো। গতোরাতে পর্দা সরিয়ে
দিয়েছিলো- তাই আলো ঘরের ভেতরে এসে ঢুকছে। তীব্র আলো, পায়ের পাতা দুইবার
সরালে দুইবারই ছায়া সরে গেলো।