কবিতা
আশ্বিনে
আশ্বিন —পৃথিবীতে ল্যান্ড করেছে অথৈ অভাব
অসীম নিঃসঙ্গতা
ধানক্ষেতের পাশে বসে আছি
অসম্ভব সম্ভাবনা নিয়ে
কুয়াশার আড়ালে লুকানো
রহস্যের মৌসুম।
বিদেহী আশ্বিনে
বুকের ভেতর জমে আছে ব্যর্থ ঢাকার দূষিত বাতাস আর বিভৎস চিন্তকেরা।
পৃথিবীতে দুজন শত্রু ও একজন বন্ধু ছিলেন আমার। শত্রু ও বন্ধুজন চলে গেলেন। এখন বোবাকালা। অনন্ত বধিরতা নিয়ে শুয়ে আছি নিজস্ব সৌন্দর্য খেয়ে
কোথাও পুড়ে যাচ্ছি। কোথাও গলিত বরফ। এমন ছুরিতে শান দেয়া আছে, নিখুঁত অদৃশ্য ঘ্রাণে ফালিফালি হই
তোমার পাশে ম্লান বয়ে যাচ্ছি রোদ। ফুলগুলো যেনো খুন হওয়ার অপেক্ষায় এখনও ঝরছে না
আশ্বিনের খরা
সন্দ্যা। মূলত আমাদের ভোর!
বেদনার ভাড়ে নুয়ে পরে পালক
তোমাকে বলা যেতো যেসব ক্ষত
স্পর্শে নিভে যাবে নরকের তাণ্ডব
এমন হাত! হায় হাত—
বিষের আশ্বিনে
মৃত নদী; স্মৃতির বোহেমিয়ান স্রোতে উৎলে ওঠা ভাতের ফ্যানায় ফিরতে চায়। ফেরার কৌশল এখনও চিন্তার বৃত্ত থেকে বহুদূরে। আশ্বিনের মেঘ —বৃ্ষ্টিতে ধুয়েছি বিগত শোক ও ক্ষোভ। নির্ভরতার প্রতিক তুমি। তবুও তোমাকে রক্তাক্ত করে আমার ভেতরের দলিত ঘোর। ভেতরে ভেতরে ঘুরপাক খেয়ে খেয়ে বিক্ষিপ্ত —ছিটকে পড়ে, কেন্দ্রের বিকেন্দ্রিক মতাদর্শে। দৃষ্টির চক্করে যা, তারও অধিক চিন্তার বড়শিতে ঝুলে থাকা দৃশ্য। চরে জেগে ওঠা প্রাণ।
মৃত দিনের পিঠে লিখে যাচ্ছি—কাঠগোলাপের ঝরে যাওয়া কান্না; স্বর্ণচাপার ঘ্রাণে হলুদ সন্ধ্যার ম্লান হাসি।
গান গায়—না ফেরার তাড়না। রাতের অন্ধকার ভেদ করে ঘুম, আততায়ীর প্রটোকলে জেগে থাকে। বারান্দার হ্যাঙারে ঝুলে আছে বেদনা —থিরথির কাঁপতে থাকা প্যাচার পালক, চিন্তার দৌরত্বে বিভাজিত পৃথিবী থেকে পৃথিবীর।
কিছুই বলবো না আর। যা কিছু বলতে চাই সব, সবাই জানে —
মৃতপ্রায় নদীর প্রবাহে
যখন ছাগলটি খাচ্ছে ঘাস
বিভৎস! কিন্তু কি আনন্দ খাওয়ায়
যেহেতু আমি ভোজন সন্ত্রাসী
যখন ঘাসটিকে খাচ্ছে! শালিক, বেড়াল
চমৎকার দৃশ্য যদিও, আগ্রাসী থাবা
যখন পিঁপড়াদের ডিবিতে মুতি
কি নান্দনিক আরাম, চূড়ান্ত বিপন্নতা
অজস্র প্রাণ! অর্থাৎ স্বপ্ন
প্লাবনে বিধস্ত আয়ু
হাওয়ার চক্রান্তে
বিষল্ফলা। বিস্ফরণে আক্রান্ত সব
আহ্! দম ফুরিয়ে যাওয়ার নৃশংসতা
তপড়ায়। হৃৎপতনের বায়স্কোপ
ওখানে কি আছে সন্দ্যা?
হাঁস ছানার চৈ চৈ
অথবা
বিষন্ন বিকেলের নিমগ্নতা
পদ্মপাতায় ডাহুকের নাচ?
মায়ের জন্য উৎকন্ঠা কি আছে?
অপেক্ষার তিক্ততা?
কি আছে ওখানে?
জানাও—
ঐসব বাঞ্চোতেরাও কি আছে?
ক্ষতের খেদমতে নিয়োজিত
বহিষ্কৃত আত্মা
খতিয়ান ছিঁড়ে ফেলবো
আমাদের দেখা হবে
কুয়াশাচ্ছন্ন শীৎকারে
অ সময়ে
অনতিবিলম্বে আমরা মিলিত হবো
মৃতপ্রায় নদীর প্রবাহে
অ্য জার্নি বাই ডেড ইউনিভার্স ; রিটায়ার্ড হেল (মহাবিশ্বের দিকে যাত্রা; অবসরপ্রাপ্ত নরক?)
যে বন্ধু ও স্বজন ইতিমধ্যেই বেঁচে গেছেন
চিরস্থায়ী বা ক্ষণস্থায়ী ক্ষত থেকে সেরে উঠেছেন
যাঁরা মরে আছেন। ক্ষতের খামারে
হৃদয়! অনাবিষ্কৃত গহবর
বেদনার বিস্তীর্ণ উর্বর জলাভূমি
গান কি ঝরে রক্তস্রোতে?
অ যখন আহ্ করে উঠলো
পাখি উড়তে চাইলো
ডানা ছিলো কাটা
(আর দেরি নয়
দেরি নেয়
দেরি নয়
আমাদের লাশ
তুলে নেবে ট্রাকে
অজ্ঞাত পরিচয়ে, স্তুপের স্তুপ
শেয়াল শকুনের পাকস্থলীতে
আমাদেরও আদিঘর
বন্ধু, ভেবো না ওসব বিষয়
বলো তোমাদের কথা।
ভাষার ব্যারিকেড ডিঙিয়ে
দ্রবীভূত হাওয়ার খাঁচায়
পাখিটির ডানা কাটা পরীদের মজমায়
বাষ্পীয় তৃষ্ণা)