কবিতা
অসীম নন্দন
বেহায়া কীটের মতন
চলৎশক্তিহীন। চোখ এবং কান বন্ধ। মুখও খুলতে মন চায় না। মুখ খুললেই গলার গভীর থেকে কেবল গালি বের হয়ে আসে। ভাবের সাথে আবেগের কোনো সম্পর্ক পাই না। কোন খা/নকির পোলায় কয়, ধর্ষণের জন্য মেয়েদের পোশাক দায়ী? কোন চু/ত/মারানি বলে, মিষ্টি উন্মুক্ত থাকলে মাছি বসবেই? নিজের কাছে নিজেকে বোকা/চো/দা লাগে। ধর্মের লেবাসে শুকরের ছানাগুলা এখন ডাইনোসর হয়ে গেছে। মাইকে মাইকে লক্ষ লক্ষ ডেসিবল আওয়াজ, মানুষের কান বধির; চোখ অন্ধ; বিবেক চলে গেছে কৃমিদের পেটে। মাথার ভিতর থেকে পচা গুয়ের গন্ধ বের হইতেছে। আমি তো বুক ভরে শ্বাস নিতে পারতেছি না। এত দুর্গন্ধ চতুর্দিকে। ৮ বছরের ১টা মেয়ে। নাম আছিয়া। মেয়েটার দোষ, সে মেয়ে। মেয়েটার দোষ, সে এই শয়তানের দেশে জন্ম নিয়েছিল। তাই বুঝি এভাবে নরখাদকের ভোগের বস্তু হয়ে বিদায় নিতে হলো দুনিয়া থেকে। প্রতি বছর প্রতি মাসে প্রতি সপ্তায় প্রতি দিনে প্রতি ঘন্টায় প্রতি মিনিটে প্রতিটি সেকেন্ডে এমন আরো কত হাজার আছিয়া’কে খুবলে খাচ্ছে ঐ হায়েনার দল; তার হিসাব কি আমরা জানি? আর নপুংসক আইনের ফোকর দিয়ে অপরাধ যেন অট্টহাসি হাসছে। আমার বুক জ্বলে যাচ্ছে, গলা শুকিয়ে আসছে, চোখ ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে। আমি, আমি বলার মতন ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। শব্দগুলো যেন কোন অন্ধকারে ফেরার হয়ে গেছে। আমি ভুলতে বসেছি বাক্যের গাঠনিক বৈশিষ্ট্য। কোথায় থামবো কোথায় থামা উচিত কিংবা এভাবেই নিশ্চুপ চলে যাবো কিনা কিছুই আমি বুঝে উঠতে পারছি না। যতিচিহ্ন গুলোর সংকেত ভুলে গেছি। বোমার মতন কিছু মগজের ভিতর হিসহিস করছে। যেন অকস্মাৎ এক মারণাস্ত্র আমার বুকের ভিতর চিৎকার করে উঠছে। গাছের ডালের ফাঁকা থেকে যে শালিকের ঝাঁকের কিচিরমিচির আমার কানে আসছে, তাতেও আমি চলৎশক্তিহীন হয়ে যাচ্ছি। মনে হচ্ছে, পাখিগুলো আমায় ইচ্ছারকম গাল দিচ্ছে। চুত/মারানি বলছে খান/কির পোলা বলছে। যদি মরে যেতাম, যদি এই দুনিয়ার মলস্তূপে আর দ্বিতীয় তৃতীয় বা চতুর্থ কোনো বারের জন্যই নিঃশ্বাস না নিতাম, হয়তো স্বস্তি হতো। যে অক্সিজেন আছিয়া’র ফুসফুসে জায়গা পেল না, সেই অক্সিজেন কীভাবে আমি নির্লজ্জের মতন বেহায়া কীটের মতন বুক ভরে নেই!
গোলাপের ঠোঁট
‘শিশু’ শব্দটির সাথে জড়িয়ে আছে নিষ্ঠুর সততা। শব্দটি শুনতে আমার ভালো লাগে সুখ লাগে। কিন্তু যখনই শুনি কেউ একজন জন্ম দিতে যাচ্ছে একটি শিশু, আমার বেদনা বোধ হয় ঘেন্না পায়। ‘শিশু’ হচ্ছে নির্ভেজাল নির্লজ্জ সৎ উদ্দেশ্যের আরেক নাম। শিশু পাপ অপাপ ন্যায় অন্যায় ঘৃণা অঘৃণা বোঝে না। সে শুধু পৃথিবীতে আসে মৃত্যুর মতন সৎ হয়ে থাকতে। কিন্তু আমরা ধীরে ধীরে তার মাঝে অশ্লীলতা অসততা অপবিত্রতা অমানবিকতা অজ্ঞানতা অপারগতা ইঞ্জেক্ট করি। খুব ধীরে ধীরে স্তন্য পান থেকে প্রথম উঠে দাঁড়ানো তারপর ক্রমশ শিশুর রক্তে বিষ ঢুকিয়ে দেই, সুনিপুণ সুচারুভাবে তাকে লম্পট করে তুলি। যেমনটা আমরা নিজেরাও হয়েছি। মেঘে মেঘে বেলা বাড়লে শিশুটি দু পায়ে ভর দিয়ে হিংসা করতে শেখে তারপর হাত বাড়িয়ে মুঠো করতে করতে শিখে নেয় হিংস্রতা। আমার সবচেয়ে সুন্দর লাগে অভ্রুণ অবস্থাকে। যখনই শুনি একটি শিশু আসছে পৃথিবীতে, আমি চোখের সামনে দেখি অভ্রুণ থেকে একটি ভ্রুণ ফুটছে, ক্রমশ বদমাসের মতন পবিত্র মাংসল হচ্ছে, অপূর্ণতার মতন পূর্ণতা পাচ্ছে তারপর, তারপর মানুষের মতন অপবিত্র, অধার্মিকের মতন লম্পট, ধার্মিকের মতন অমানবিক হয়ে উঠছে একটি গোলাপের ঠোঁট।
